ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে আগুনে বড় ধাক্কা রপ্তানি খাতে
বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি পোশাক শিল্প আবারও বড় ধাক্কায় পড়েছে। শুক্রবার রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো কমপ্লেক্সে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে বিপুল পরিমাণ রপ্তানিমুখী পোশাক সামগ্রী ও কাঁচামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
আগুন লাগার সময় ও কারণ
দমকল বিভাগের তথ্যমতে, রাত ১০টার দিকে কার্গো গুদামের ভেতর হঠাৎ ধোঁয়া দেখা গেলে কর্মীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে।
এখনও পর্যন্ত আগুন লাগার মূল কারণ নিশ্চিতভাবে জানা না গেলেও প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ইলেকট্রিক শর্ট সার্কিটের কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
উদ্ধার অভিযান ও ক্ষয়ক্ষতি
দমকল বাহিনীর ১২টি ইউনিট প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রায় ২০ কোটি টাকার পোশাক পণ্য ও রপ্তানি নথিপত্র এই অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তবে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে সময়ের — হাজারো রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান তাদের সময়মতো অর্ডার পাঠাতে পারবে না, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়েও প্রভাব ফেলবে।
আরো দেখুন 👉 ডেঙ্গু আক্রান্ত বাড়ছে কারণ বিশ্লেষণ ও কার্যকর প্রতিকার
পোশাক শিল্পে প্রভাব
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (BGMEA) জানিয়েছে, এই ঘটনায় অন্তত ৫০টিরও বেশি রপ্তানি অর্ডার বিলম্বিত হবে।
ইউরোপ ও আমেরিকার ক্রেতারা সময়মতো পণ্য না পেলে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংগঠনের সভাপতি।
সরকারের প্রতিক্রিয়া
বাণিজ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত রপ্তানিকারকদের পাশে থাকবে সরকার। দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যাতে আগুনের কারণ উদঘাটন ও ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা রোধ করা যায়।
এছাড়া, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ
বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ আসে পোশাক শিল্প থেকে।
এই খাতে সামান্য ব্যাঘাতও দেশের অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অগ্নিকাণ্ড দেশের রপ্তানি প্রবাহকে সাময়িকভাবে ব্যাহত করবে, তবে দ্রুত পুনরুদ্ধার সম্ভব যদি সরকার ও ব্যবসায়ীরা একসাথে কাজ করে।
শেষ কথা
শাহজালাল বিমানবন্দরের আগুন শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, বরং দেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক খাতের জন্য এক সতর্ক বার্তা। নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত নজরদারি এবং জরুরি সাড়া প্রদানের সক্ষমতা বাড়াতে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।
